
বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনিটরিং করা দরকার
বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া


তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন
রাজধানীর তুরাগ-উত্তরার কাঁচাবাজারগুলোতে বর্তমান সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কমের এ ধরনের অজুহাতে চড়া সবজির খুচরা ও পাইকারি বাজার। স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রকারভেদে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। দু’সপ্তাহ ব্যবধানে প্রকারভেদে সবজির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ২০ টাকা। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। তুরাগ, উত্তরা ও টঙ্গী বাজারে পাইকারি-খুচরা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। ভোর থেকেই দরদাম আর কেনাবেচায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে উত্তরার ১০ নং সেক্টর স্ল্যুইচ গেটের ফলের বাজার ও কামার পাড়া কাঁচা বাজার সবজির আড়ৎ। তুরাগের ডিয়াবাড়ী কালা মার্কেট ও চন্ডাল ভোগ এলাকার খুচরা কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ ক্রেতাদের বলছে, আমরা একদামেই ক্রয় করি সবজি, আবার এক দামেই বিক্রিও করি। একটি টাকাও কম দেয়া যাবে না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে দু’টি পাইকারি আড়ৎ এবং বিকেলে স্থানীয় কয়েকটি কাঁচা বাজার সরজমিনে পরিদর্শন করে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুসন্ধান ও খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায়, পাইকারিতেই বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। পাইকারি বাজারে কেজিতে ৫/১০ টাকা বেড়ে পটল ৭০ টাকা। সেটি খুচরা বাজারে ১০০ টাকায় আজ বিক্রি করা হচ্ছে। বেগুন ৭০/৮০ টাকা, খুচরা বাজারে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে করলা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৮০/২০০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা ও গাজর ৮০/৯০ টাকায় বেঁচাকেনা হচ্ছে। পাইকারি বাজারে ৮০ টাকার বরবটি খুচরা বাজারে বিক্রি করা হয় ১০০ টাকা। আর ঢ্যাঁড়স কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। আগাম শিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া কয়েকটি সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ঝিঙে ৫০ টাকা, ধুন্দল ও কচুর লতি ৭০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচা বাজারের আড়তদার আনোয়ার হোসেন ও মো. জহির উদ্দিন জানান, আবহাওয়ার তারতম্য ও সরবরাহ কম থাকায় চড়া সবজির বাজার। বৃষ্টির কারণে অনেকের ফসল খেতেই নষ্ট হচ্ছে। যার কারণে সরবরাহ অনেক কম। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে শীতের সবজি বাজারে আসা শুরু হলে দাম অনেক কমবে।
শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ বলছে, সবজির বাজারে অস্থিরতা, বেশিরভাগের দাম ৮০ টাকার ওপরে। উত্তরা ও তুরাগের বাজারে সবজির দাম দিন দিন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে অস্থিরতা চললেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ও বিকেলে তুরাগের ডিয়াবাড়ী, চন্ডাল ভোগ, নলভোগ, খালপাড় ব্রিজ বাজার, ১১ নং সেক্টর বাজার, স্ল্যুইচ গেইট, কামার পাড়া, আব্দুল্লাহপুর, আজমপুর বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজির দাম আগের চেয়ে আরও বেড়ে গেছে। পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই ৭০/৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
সবজির বাজারে লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১০০ থেকে ১১০ টাকা । বেগুনের কেজি উঠেছে ১০০/১৩০ টাকায়, যা অনেক পরিবারের জন্য এখন প্রায় বিলাসদ্রব্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ঝিঙে ৮০ টাকা, পটল ৯০/১০০ টাকা ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০/২০০ টাকা কেজিতে। ৮০ টাকার বরবটি ৯০/১১০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০/৯০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিয়াবাড়ী কালা মিয়া মার্কেট বাজারে সবজি কিনতে আসা গৃহিণী জুলেখা বেগম ও আমেনা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা পরিবারের জন্য সামান্য বাজার করতেই এখন হাজার টাকা লাগে। আগে যেখানে তিন-চার ধরনের সবজি কিনতে পারতাম, এখন বাধ্য হয়ে শুধু একটা-দু’টো সবজি নিয়েই ফিরতে হয়। দাম শুনলেই মাথা ঘুরে যায়। এখানকার ব্যবসায়ীরা নাকি একদামে পণ্য কিনে; আবার একদামেই আমাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এক টাকাও কম নেয় না ব্যবসায়ীরা। নিলে নাও; না কিনলে সামনে হাঁট।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আটা ও ময়দার সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। আটা ও ময়দার কিছুটা সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। নতুন প্যাকেটের স্টক এখনও তেমন একটা বাজারে আসেনি। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। ক্রেতারা বলছে, পরিবারে দৈনন্দিন খরচ সামলানো দিনদিন কঠিন হয়ে পড়েছে। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে নতুন করে চাপ বাড়ল। বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনিটরিং করতে হবে। না হলে দাম কমবে না।
এবিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট মহলের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তুরাগ ও উত্তরার সর্বস্তরের জনগণ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ